মৃত ব্যক্তির জীবিত হয়ে দলিল সম্পাদন

মৃত ব্যক্তির জীবিত হয়ে দলিল সম্পাদন

সিলেট প্রতিনিধি:
সিলেট নগরীর কলবাখানি এলাকায় এক অভিনব জালিয়াতির অভিযোগ করেছেন এক নারী। তিন দশকেরও বেশি সময় আগে মৃত্যুবরণকারী ওই নারীর দাদাকে জীবিত দেখিয়ে দলিল সম্পাদনের ঘটনা ঘটিয়েছে একটি চক্র। ২০০২ সালের ১৮ জুন সিলেট সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে এই জালিয়াতির দলিল সম্পাদন করা হয় বলে তিনি দাবি করেছেন। অভিযোগকারী ওই নারী হচ্ছেন নগরীর উত্তর কাজীটুলা অন্তরঙ্গ ২১/২ নম্বর বাসার মৃত. মো. রকিব উদ্দিন আহমদের মেয়ে দিলরুবা আক্তার এ্যানি।

তার দাবি চক্রটি জাল দলিলের মাধ্যমে দলিল সম্পাদনকারীরা চলতি বছরের ১৯ ফেব্রæয়ারি দখল করে নিয়েছেন নগরীর আম্বরখানা মৌজার আড়াই শতক ভূমি। আর এসব অভিযোগ উল্লেখ করে তিনি ৯ জনের নামসহ সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা (নং১৪(০৩)১৮) দায়ের করেছেন। এদিকে মামলায় অভিযুক্তরা এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে উল্লেখ করেছেন।

মামলায় দিলরুবা বিবাদী হিসেবে নগরীর কাজীটুলা উঁচাসড়ক এলাকার ১১৮ নং বাসার বাসিন্দা মৃত আব্দুর রহমান উরফে বাদশা মিয়ার ছেলে প্রবাসী মো. আব্দুল মোমিন, মো. আব্দুল মুহিব, মো. আতিকুর রহমান, লাইব্রেরি ব্যবসায়ী মিফতাউর রহমান, প্রবাসী মো. আবেদুর রহমান ও মেয়ে মোছাৎ মমতা বেগম, সিলেট সদর সাব রেজিস্ট্রারী অফিসের দলিল লেখক মাহমদ আলী দলিল পরিচয়কারী ও স্বাক্ষী চৌকিদেখি এলাকার মৃত এল বাহাদুরের ছেলে এম বাহাদুর, দলিরের স্বাক্ষী মৃত. রাম বাহাদুরের ছেলে বালুচরের বাসিন্দা সুমন আহমদ এর নাম উল্লেখ করেছেন।

পাশাপাশি জালিয়াতি করে সম্পাদনকৃত দলিল বাতিলের দাবিতেও পৃথক আদালতে পৃথক আরেকটি মামলা করেছেন এ্যানি। থানায় দায়েরকৃত মামলাটি পুলিশ তদন্ত করছে। আর আদালতে দায়েরকৃত স্বত্ব মামলাটির ব্যাপারে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নোটিশ প্রদান করেছেন আদালত। আগামী ১২ এপ্রিল সেই নোটিশের জবাব প্রদানের নির্দেশনা রয়েছে।

দিলরুবা আক্তার এ্যানি তার অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, আম্বরখানা মৌজার জেল নং ৯২, এস এ খতিয়ান ৪৯, দাগ নং ৯৬৮ এ মোট আড়াই শতক ভূমিটির মূলমালিক তাঁর দাদা মৃত মো. রিয়াজ উল্লাহ উরফে রিয়াজ মিয়া। তিনি ভোগদখলদার থাকাবস্থায় ১৯৮৬ সালের ২৪ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর ত্যাজ্যবিত্তে উত্তারাধিকারী সূত্রে ওই ভূমিটির মালিক হিসেবে তিনি ও তাঁর ভাই এ কে এম নজমুদ্দিন রাজিব, বোন ফারহানা রকিব জেনি, রাবেয়া রকিব রুনি, শাহরিয়া রকিব লিজা ও তাঁর মাতা আনজুমান আরা বেগম স্বত্ববান রয়েছেন।

কিন্তু গত ২০০২ সালের ১৮ জুন নগরীর কাজীটুলা উঁচাসড়ক এলাকার ১১৮ নং বাসার বাসিন্দা মৃত আব্দুর রহমান উরফে বাদশা মিয়ার ছেলে মো. আব্দুল মোমিন, মো. আব্দুল মুহিব, মো. আতিকুর রহমান, মিফতাউর রহমান, মো. আবেদুর রহমান ও মেয়ে মোছাৎ মমতা বেগম, সিলেট সদর সাব রেজিস্ট্রারি অফিসের দলিল লেখক মাহমদ আলী দলিল পরিচয়কারী ও স্বাক্ষী চৌকিদেখি এলাকার মৃত এল বাহাদুরের ছেলে এম বাহাদুর, দলিলের স্বাক্ষী মৃত রাম বাহাদুরের ছেলে বালুচরের বাসিন্দা সুমন আহমদ এরা সবাই মিলে তার মৃত দাদার নাম ব্যবহার করে অন্য লোককে রিয়াজ উল্লাহ সাজিয়ে ৮৪২৫/২০০২ নং দলিল সিলেট সদর সাব রেজিস্ট্রারি অফিসে সম্পাদন করেন। মো. আব্দুল মোমিন, মো. আব্দুল মুহিব, মো. আতিকুর রহমান, মিফতাউর রহমান, মো. আবেদুর রহমান ও মোছাৎ মমতা বেগমের নামে রেজিস্ট্রারি করা হয় দলিলটি।

দিলরুবা আক্তার এ্যানি বলেন- ‘চলতি বছরের ১৯ ফেব্রæয়ারি মো. আব্দুল মোমিন ও তাঁর ভাইয়েরা আরও ৫/৭জন অজ্ঞাতনামা লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সম্পাদনকৃত জাল দলিলের মাধ্যমে উক্ত ভূমিতে মালিকানা দাবী করে ভূমির উপর গিয়ে টিনশেডের ঘর তৈরী করেন। পরে এ্যানি ও তার বোনরা মিলে দখলকারিদের বাধা প্রদান করলে তাঁদেরকে প্রাণে মারার হুমকি প্রদান ও নানারকম হুমকি প্রদান করা হয়।’

দখলের ব্যাপারে মৃত বাদশাহ মিয়ার ছেলে মিফতাউর রহমানের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করলে তিনি দাবি করেছেন, দিলরুবা আক্তার এ্যানি যে অভিযোগ করেছেন সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। দলিলটি যথাযথ প্রক্রিয়াতেই সম্পাদিত হয়েছে। আর আমার ভাইদের মধ্যে শুধুমাত্র আমি দেশে বসবাস করছি। বাকিরা প্রবাসে রয়েছেন। সুতরাং এটি যে কাল্পনিক সেটি এখানে স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে।

তিনি বলেন- ‘দিলরুবা মামলা যখন করেই ফেলেছেন তবে তার অভিযোগের সত্য-মিথ্যা পুলিশ তদন্ত করে দেখবে। কাগজপত্রে যদি প্রমাণিত হয় জায়গাটি আমাদের নয় তবে আমরা ছেড়ে দিবো। কোন আপত্তি নেই।’

এদিকে এ ব্যাপারে স্থানীয় কাউন্সিলর দিলওয়ার হোসেইন সজীব বলেন- ‘আমি বিষয়টি সমাধানের ব্যাপারে কাজ চালিয়ে নিচ্ছিলাম। কিন্তু তারপরও দিলরুবা আক্তার এ্যানি মামলা করেছেন। এখন বিষয়টি পুলিশ ও আদালতের কাছে। তারপরও আমি উভয়পক্ষের মধ্যস্থতায় একটি সুন্দর সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে নিচ্ছি।’

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment